ঢালিউড তারকা শাকিব ও বুবলির গোপন বিয়ে ও সন্তান নিয়ে ঝড় উঠেছে দেশের মিডিয়া। গত কিছুদিন আগে পুরোনো বেবি বাম্পের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে চিত্রনায়িকা বুবলি। এরপর থেকেই শুরু হয় নানা গুঞ্জন। অবশেষে আজ তারা দুজনই নিজেদের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে সন্তানের ছবি শেয়ার করেছেন। তবে সন্তানের ছবি প্রকাশ করলেও তাদের বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি। সন্তানের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়নি কাবিন নামার ছবি। তবে বুবলি জানিয়েছেন, তিনি যেহেতু মুসলিম তাই সবকিছু শালীনভাবে ও ধর্ম মেনেই হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর দাবি করছে, সন্তানের কথা স্বীকার করলেও এখন আর একসঙ্গে থাকছেন না শাকিব-বুবলী। ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার শুটের আগেই এই দম্পতির ‘বিচ্ছেদ’ হয়েছে বলে দাবি সূত্রগুলোর।
এর আগে ঢাকায় সিনেমার নায়িকা অপু বিশ্বাস শাকিব খানকে ২০০৮ সালে গোপনে বিয়ে করে ২০১৬ সালে লাপাত্তা হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ফিরে এসেছিলেন সন্তান আব্রাম খান জয়কে কোলে নিয়ে। এরপর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ফাঁস করেছিলেন সবকিছু। এরপর বিচ্ছ্যেদের পথে হাঁটেন এই দম্পতি।
এতো বিপত্তি ও হাঙ্গামার পেছনে রয়েছে গোপন বিয়ে। ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে। আর তা না হলে বাঁধে এমনই বিপত্তি।
পবিত্র জীবনের জন্য বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব তুলনাহীন। শুধু তাই নয় বিবাহিত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ স্বয়ং সাহায্য করেন বলে বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসূল সা. বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক আছে যাদের প্রতি সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় দায়িত্ব বলে মনে করেন, তাদের মধ্যে একদল হচ্ছে ওইসব ব্যক্তি যারা পবিত্রতা রক্ষা করে ও পাপকর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিবাহ করে।
বিয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আবশ্যকীয় বিধান রয়েছে ইসলামে। এর মধ্যে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করাও অন্তর্ভূক্ত। আজকাল অনেকে বিয়ের কথা স্বীকার করতে চান না। বন্ধুদেরও দাওয়াত করেন না বিয়েতে। যা রীতিমতো মনমালিন্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিয়ের কথা না জানানোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অনেকের সৎ উদ্দেশ্য থাকলেও কারো কারো উদ্দেশ্য থাকে বিয়ের কথা জানলে অন্য নারীরা তার সঙ্গে আর মিশবেন না।
আবার আজকাল ফেসবুকের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে অনেক বিবাহিতরাও সিঙ্গেল দিয়ে রাখেন। তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্যও একই। অনেক পুরুষকেও এখন দেখা যায় বিয়ের কথা গোপন রাখছেন পরকীয়া করার সুবিধার্থে। এসব সামাজিক দিক থেকে যেমন নোংরা মানসিকতা তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ অন্যায়।
ইসলামে লুকিয়ে বিয়ে করাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর। এলাকায় মাইকিং করারও ঘোষণা এসেছে হাদিসে। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর শরীরে হলুদ রঙ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, আমি একটি খেজুরের আঁটির ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণ বিনিময় দিয়ে একজন আনসারি নারীকে বিয়ে করেছি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার বিয়েতে বরকত দান করুন। তবে তুমি একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমার ব্যবস্থা করো।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, এখানে উৎসাহ প্রদানের জন্য নবীজি এ কথা বলেছেন। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, প্রত্যেকেই নিজের সাধ্য অনুযায়ী ওলিমা অনুষ্ঠান করবে। অল্প পরিসরে হলেও করা ভালো। এতে ধনী-গরিব সবার জন্য ওলিমা করা সহজ হয়। সাবইকে জানানো বা ব্যাপক ঘোষণার বিষয়টি এসেছে অন্য একটি হাদিসে। হজরত আয়েশার রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহবীর বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, বিয়ের ঘোষণা প্রদান কর এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এ জন্যে দফ পেটাও। (দফ হলো একপিঠ বন্ধ একপিঠ খোলা এক ধরনের বাজনা।)
আরেক ধরনের বিয়ে প্রচলিত রয়েছে ইদানিং। সেটার নাম লাভ ম্যারেজ। যা অধিকাংশ সময়ই বাবা মা বা পরিবারের সম্মতি ব্যতিত করা হয়। এ ধরনের লুকিয়ে বিয়ে করা ইসলামে একেবারেই অবৈধ। বিয়ে মুসলমানদের জন্য ফরজ। আর আল্লাহ তায়ালা সন্তানের অভিভাবককে এ কাজ সম্পন্ন করতে বলেছেন। “আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।” [সূরা নূর, ২৪:৩২]
হাদিসেও নবী করিম সা. এ ধলনের লুকিয়ে বিয়েকে স্পষ্টভাবে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। নবী সা. বলেছেন, “যারা তার অভিভাবকের (বাবা-মা কিংবা বড়ভাই এক কথায় অবিভাবক) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।” [হাদিসটি তিরমিযি (১০২১) ও অন্যান্য গ্রন্থকার কর্তৃক সংকলিত এবং হাদিসটি সহীহ]
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর এই ব্যাখ্যায় স্পষ্টই প্রমানিত যে, বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে পালিয়ে বিয়ে করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নবীজি সা. এরূপ বিয়েকে সরাসরি বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।
পাঠকের মতামত